অন্তরালে অন্দরে (১)

আজ মিতুলের ২৭ তম জন্মদিন। অদিতি ওকে স্কাইপ-এ জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছে। অদিতি মিতুলের স্ত্রী। দু’বছর আগে ওদের যখন বিয়ে হল, বিয়ের পরের দিনই অদিতির জিআরই-এর ফলাফল জানা গেল। অদিতি ভয়াবহ রকমের ভালো করেছে। ওর স্কোর তিনশ’ ত্রিশ। অদিতি ভেবে পেল না এতো নম্বর ও কি করে পেল। মিতুল ওকে অনেক অভিনন্দল জানিয়েছিল সেদিন। অদিতি মিতুলকে বলেছিল, আমাদের বিয়েটাই আমার ভাগ্যটা ফেরাল! আমি তো ভেবেছিলাম, তিনশর উপরে পাব না। তুমি আমার জীবনের আশীর্বাদ মিতুল। মিতুল হেসে বলেছিল, কি যে বল! তুমি অত না পড়লে কি এতো ভালো নম্বর পেতে? অদিতি গেল বছরে পিএইচডি করতে নর্থ অ্যামেরিকার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পারি জমিয়েছে। মিতুল আর অদিতি দু’জন সহপাঠী তুমুল মেধাবী ছিল। কম্পিউটার সাইন্সে পড়া দুজনের ঝোক দুদিকে। অদিতি সারাদিন গবেষণা পত্রে ডুবে...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের পথচলা, আমাদের পথে (পর্ব ২)

আমাদের পথচলা আমাদের পথে (পর্ব ১) স্বপ্নের ঠিক এ পর্যায়ে বুঝতে পারলাম গভীর সমুদ্রে তলিয়ে যাচ্ছি, নিরুকে দেখতে পাচ্ছি না। তবে ওর চিৎকার শুনতে পাচ্ছি, ‘মোষের মত ঘুমাচ্ছো কেন, ওঠো। এই ওঠো।’ মোদ্দা কথা, নিরু এক গ্লাস পানি আমার মুখে ছিটিয়ে ঘুম ভাঙানোর তার অভিনব কৌশলটি কাজে লাগাচ্ছিল এতক্ষণ! আমি শান্তভাবে উঠে বসলাম। ঘুমের ঘোরেই কি না জানি না নিরুকে অ্যানিভারসারির শুভেচ্ছা না জানিয়ে বলে বসলাম, ‘শুভ জন্মবার্ষিকী নিরু। জীবন আলোকিত হোক। মঙ্গলময় হোক মুহূর্তগুলো।’ এই লাইন তিনটা আমার বান্ধা লাইন। যে কারো জন্মদিনে অনলাইনে অফলাইনে এই তিন লাইন দিয়ে শুভেচ্ছা জানাই। নিরুর চেহারা অগ্নিমূর্তি ধারণ করল। তবে কিছু বলল না। শুধু বলল আজ কত তারিখ? আমি বললাম, ‘আজ ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখ। বিশ্ব রেডিও দিবস। দেশবরেণ্য অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি কবছর আগে আজকের...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের পথচলা, আমাদের পথে (পর্ব ১)

নিরুর খুব রাগ। খুবই। আজ ওকে বারোটা বাজার ৪০ মিনিট দেরিতে উইশ করেছি দেখে রাতে আর পাশে শুতে দেয়নি! ড্রয়িং রুমে আধাশোয়া হয়ে লিখছি। আমি খুচরা লেখক। হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিকে স্মরণ করে তার লেখাকে শত ভাগ অনুসরণ-অনুকরণ করে বাজারে ৯ টি বই বের করেছি। আসে পাশে যা দেখি এবং দেখি না, তাই নিয়ে লিখে ফেলি। লেখার মান নিয়ে কোন চিন্তা করি না। কারণ, আমরা যখন ভার্সিটি পড়ুয়া ছিলাম তখন পুটুনদা’ নামে একজন মহান লেখক ‘লেখক হবার ২৩১ টি নিয়ম’ বইয়ের ৩২ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেছিলেন, লেখার মান বিবেচ্য নয়। আজকের নিম্নমানের চণ্ডাল লেখা কাল হতে পারে হরিশ্চন্দ্র অথবা শ্মশানের শিবের মত মাননীয়। আজকের এই লেখাই হতে পারে কালকের মহাযোগী সম্রাটের শেষ চিঠির মত মূল্যবান। কাল তোমাকে ‘ওরাই’ অর্ঘ্য দান করবে, করবে নান্দী-পাঠ। আমি সেদিন ভেবে...বাকিটুকু পড়ুন

তিনটি গল্প এবং…

গল্প-০১ আশি বছর বয়সী মুহম্মদ শাহজাহান মিয়ার বকরির বাচ্চা হয়েছে। এই আনন্দ সংবাদ বাবাকে দেবার জন্য তার ছোট মেয়ে হালিমা বুশরি মোবাইল ফোনের দোকানে এসেছে। তার বাবা ঢাকায় থাকে। রিক্সা চালায় সেখানে। সাথে তার বড় ছেলে রাসেল আর তার বউ-বাচ্চাও থাকে। মাস শেষে শাহজাহান মিয়া ছয় থেকে সাতশ টাকার বাজার করে দেন ছেলের বউকে। তাতেই তারা খুশি। বাকি টাকা শাহজাহান মিয়া গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এমাসে তিনি তার বউকে সাড়ে চার হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। মেয়ের ছেলে হয়েছে গত মাসে। সে বাবার বাড়িতে মেহমান এসেছে। ওদিকে আবার শাহজাহান মিয়ার শাশুড়ি জমিরন বিবি তার মেয়ের কাছেই থাকেন। তাই সংসারে অনেক খরচ। বকরির বাচ্চার কথা শুনে খুশি হল শাহজাহান মিয়া। কিন্তু এই বকরির পেছনেও খরচ আছে। প্রতিদিন চল্লিশ টাকার চালের ভুসি খায় বকরিটা।...বাকিটুকু পড়ুন

একান্তে অসমাপ্ত

সন্ধ্যা সাতটা। বাস থেকে নামলাম। আহ! অনেকদিন পর গ্রামের বাড়ি এলাম। আমাকে নিবার জন্য কাদের ভাই এসেছেন। কাদের ভাই ভ্যান চালান। তবে শুধু দিনে। রাতকানা রোগের কারণে রাতে চালাতে পারেন না। আজ তার একটু অসুবিধাই হবে বৈকি। সেটা নিয়ে কাদের ভাইয়ের মাথা ব্যাথা নেই। আমাকে দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, “আলা অসলো ভাই? এতো সান হইল ক্যানে? ভ্যানত উঠ চ যাই।” আমি বললাম, “চল কাদের ভাই।” আমাদের গ্রামের নাম ভবানীপুর। রানী ভবানীর নামে নাম। স্থানীয়ভাবে প্রচলিত নাম দেহনি। লোকে উচ্চারণ করে দেহুনি। এই নাম কোত্থেকে কীভাবে এলো জানি না। গ্রামে ঢুকতেই চামার দীঘি। তারপর ভবানীপুর মাদ্রাসা। আমাদের দাদাদের হাতে গড়া। গ্রামবাসীদের অর্থে চলে। প্রতিবছর এখান থেকে তিন জন করে হাফেজ বের হয়। মাদ্রাসা সংলগ্ন আমাদের পারিবারিক গোরস্তান। কাদের ভাইকে থামাতে বললাম।...বাকিটুকু পড়ুন