একদিন এক ছেলে ভুলে একটা কবিতা লিখে ফেলেছিল।

কবি হবার পেছনে নাকি ভীষণ কষ্ট থাকা লাগে, বেদনা লাগে, আত্মার আকুল আকাঙ্ক্ষা লাগে। তার ক্ষেত্রে উল্টোটা হল। কবিতা লেখার পরদিন থেকে তার দুর্দিন শুরু হল! প্রথম প্রথম সে বুঝতে পারেনি কষ্ট বাড়ছে কেন। সে যেহেতু স্বাভাবিক সুখী অবস্থায় থেকে কবিতা লিখে ফেলেছিল, প্রকৃতি তাঁর ভারসাম্য রক্ষা করবার জন্য ছেলেটাকে শাস্তি দিতে শুরু করল। সেদিন থেকে সে আর কথা বলত না। বললেও খুব অল্প। দিনের বেশিরভাগ সময় একা একা চলাফেরা করতো। কিন্তু একা কেন চলছিল এটা বুঝতে সময় লেগেছিল ওর। কবিতাটা লেখা হয়েছিল কার্তিকের কোন এক শেষরাতে। বাহিরে মুহুর্মুহু মৃদু সুগন্ধি হাওয়া বইছিল। মনে হচ্ছিল দূরের খুব দূরের কোন বাগান থেকে শিউলি ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ ভেসে আসছে। যেন শুধুমাত্র তারি জন্য এতো পথ পারি দিয়ে যত্নের সাথে ভেসে আসছে ঘ্রাণটা। এমন একটা আমেজে ছেলেটা সিদ্ধান্ত নিল কবিতা সে একটা লিখবেই। লিখেও ফেলল তৎক্ষণাৎ। কবিতাটা ছিল এরকম-

শুক্লা নবমী, রাতের আকাশে, উড়ছিনু মনে মনে

রা আকাশে, ত্রিশঙ্কু বাঁক ঘেঁষে, ‘আলফা’ তাঁরার সনে;

 

ট পাকিয়ে পড়ছিলে তুমি, শঙ্কু বাবুর বই

ব আবিষ্কারে ভীষণ তৃপ্ত, তোমার মন

নে হল, তুমিও যেন উজ্জ্বল ‘বিটা’ নক্ষত্রই।

তিরের মত হঠাত কি যেন এসে বাজল অশনি সংকেতে

থির হয়ে দাঁড়িয়ে আমি, হাত থেকে সরে গেল দূরবীন।।

 

চমকা অবিলম্বে, তুমি এলে বারান্দায়

রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে নিশ্চুপ, আমি বাক্যহীন!

ফিকে আলোয় দেখছি তোমায় শেষটি বারের মতোন;

বমী আলোয় দীপ্ত তুমি, ভালো থেকো, সযতন।।

 

এ কি! ছেলেটা প্রথম কবিতাতেই একজন নক্ষত্রপ্রেমী শান্ত স্বামীকে রাতারাতি মেরে দিল যে! তাই হয়তো প্রকৃতি এসব সহ্য করতে না পেরে তার সব কিছু কেড়ে নিল। খুব মায়া হয় এজন্য। একটা কবিতাই তো; তাই না? এজন্য কেন কবিকে এতো বিষাদের আস্বাদ গ্রহণ করতে হবে?! চেনা জগতটা কেমন যেন ভীষণ অপরিচিত হয়ে গেল। ওর হাতঘড়ির প্রতিটি কাঁটা অন্তত দিগুণ শ্লথগতিতে চলতে থাকল। ওর কষ্টের সময়গুলো যেন একেকদিন পঞ্চাশ ঘণ্টার হয়ে গেল।। কিংবা ষাট ঘণ্টার; কে জানে! কিন্তু সে তো কবি। শব্দ বুননের বাতিঘর। কষ্টগুলো হাসিমেখে মেনে নিয়েই চলতে থাকল। জীবনপথের পঙ্কিলতাগুলো তাকে স্পর্শ করছিল অত্যন্ত ক্ষমাহীনভাবে।

তবুও কবি থামেনি। আজও না। এখনও বিকেল শেষ হলেই তাকে দেখা যায় সান্ধ্যভ্রমণে বেড়িয়ে পড়তে। ক্যাম্পাসের আনাচে কানাচে তাকে দেখা যায় ধুম্রশলাকা হাতে এলোমেলো মন্থর গতিতে হাঁটতে। একটা কবিতা লেখার অপরাধে তাকে যত দুর্দশা অতিক্রান্ত করতে হচ্ছে, তা আসলেই মেনে নিবার মতো নয়।

আমি কবিকে হাঁটতে দেখি। কবির অসাড় অনাড়ম্বর অনুপস্থিতি অনুভব করি। অশুদ্ধ কাজগুলো দেখি। শুদ্ধ হতে বারংবার আশু আবদ্ধ হতেও দেখি। কবিকে জানাতে চাই, ‘The thing is, the reader doesn’t want to hear about bad times’। সুদিন অদূরে। প্রস্তুত হও।

শত সৌরবছর বেঁচে থাকো কবি।

This article has 3 comments

  1. arefin Reply

    ভালবাসায় সিক্ত হয়ে থাকুক আমাদের জীবন গুলো।

  2. xoso66apps Reply

    Downloaded the xoso66apps app the other day. Works great on my phone! Super convenient for placing bets on the go. Recommend checking it out if you’re always on the move. Get the app here: xoso66apps

মন্তব্য করুন