০৯.১১.১২
আমার কেন এমন হচ্ছে বলতো। তুমি আমার কাছ থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছ, তাই না। দিনে কি তোমার একবারও মনে পড়ে না আমি বলে তোমার কেউ আছে?…
_________________
০১.০২.২০১৩
তোমার সাথে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে খুব।…
_________________
০৮.০২.২০১৩
৯ বছর আগে এই দিনটাতে খুব সংকোচ নিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছিলে। তোমার আমার দিকে first look… আজকের পেপারে কি লেখা জানো, মানুষ পাগল হলে মানুষের মাথা থেকে যে হরমোন secrete হয় মানুষ প্রেমে পড়লেও সেটাই secrete হয়…
_________________
বন্যার [কাল্পনিক চরিত্র! লেখকের অন্যান্য লেখায় এই নারি চরিত্রের অবতারণা রয়েছে] তিন বছর আগের লেখাগুলো দেখছিলাম। হাতের কাছে এগুলোই ছিল। আর ছিল ওর হাতের একটা দস্তখৎ, একটা উর্দিপরা পাসপোর্ট সাইজের ছবি। তবে সেটা বাবা আটক করায় এই মুহুর্তে নিখোঁজ! বন্যাকে আমার লেখা চিঠিপত্র এবং আমাকে দেওয়া সব কিছু ওর কাছে জমা রেখেছিলাম, আমি হারিয়ে ফেলব বলে। একদিন খুব রাগ করেছিল ও। সব বাসার চুলোতে দিয়ে দিয়েছিল সেদিন। প্রেমের স্পষ্ট অক্ষরের প্রতিটি লেখার হৃদস্পন্দনের যখন চূড়ান্ত, ওর নাকি ভুল ভেঙেছিল। তৎক্ষণাৎ জ্বলন্ত চুলো থেকে সেগুলো সরিয়ে নিয়েছিল। অবশিষ্ট যা ছিল, তা শতকরা দুই-তিন ভাগ! এ নিয়ে আমার দুঃখ নেই। ওসব আমার ক্ষণিক সময়ের তীব্র অনুভূতি হতে পারে। কিন্তু আমার সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে ও যেভাবে মিশে আছে তার কথকতা আমার এক হাতের লেখা কিংবা দুই হাতেরই হোক না কেন, বড় একটা প্রিন্টিং প্রেসের শত শত কপি দৈনিক পত্রিকার মত করে ছাপালেও কম পড়ে যাবে। যাক না সে কথা।

একবার কি হল, আমার ভীষণ পিঠে ব্যথা। ডাক্তার বলল, টেবিলে বসে থেকে থেকে নাকি এরকম বাধিয়ে ফেলেছি; একটু পড়ুয়া ছিলাম কি না, তারই খেসারত। দিন কয়েক পড়ে সেই ব্যথায় কুঁকড়ে বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলাম। এসব শুনে বন্যার কি দুঃখ। ও কাছে নেই বলে দুঃখের মাত্রা যেন অস্বাভাবিক পরিমাণে বেড়ে গেল। কি পরিমাণে বেড়েছিল তার প্রমাণ আমি পাই চার বছর পড়ে। তার এক সহপাঠিনীর সাথে হঠাত দেখা গতবছর। আমাকে দেখেই আগে জিজ্ঞেস করল, ভাইয়া আপনার পিঠে ব্যথা এখনও আছে? আমি তো ভুলতেই বসেছিলাম। কিন্তু ওই সময়টায় বন্যার প্রতিক্রিয়া এতই ছিল যে চার বছরেও তার বান্ধবি তা ভুলতে পারে নি!

আমাকে একবার ও আট কুঠুরি নয় দরজা পড়তে বলেছিল। সেখানে নাকি মেয়েদের একটা চাওয়ার কথা বলা আছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় সুদীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবার পরেও এই হাবা আমি এখনও সেটা বের করতে পারে নি। আমার সাথে যে কয়টা বই চলাফেরা করে তার তালিকায় সমরেশের এই বইটা আছে। ও আমাকে অনেক প্রেম শিখিয়েছে। আমাকে গড়ে তুলবার জন্য নিমাই বাবুর মেমসাহেব পর্যন্ত মুখস্ত করিয়েছিল মনে আছে। আমার শূন্যগর্ভ বুদ্ধিহীন মস্তিষ্কে প্রতিটি মুহূর্ত ও যেন প্রেমের বীজ বপন করেছে আপন মনে। আমাকে কাছে পাবার আকুতি সবসময় আমাকে টের পাওয়াতে চেষ্টা করেছে নিষ্ঠার সাথে। বন্যাকে নিয়ে এসব গল্প আমি কোন কিছু চিন্তা না করেই বলতে পারি। ওকে নিয়ে এরকম লাইনের পর লাইন লিখতে আমার কিছুই আটকায় না।

বন্যা মৃত্যুকে খুব ভয় পায়। সেটা আমার হোক বা তার। এখনও কখনও যদি মৃত্যু নিয়ে কিছু বলি ওর উজ্জ্বল মুখের বাতিটা ধুপ করে নিভে গিয়ে গাড় অন্ধকারে ডুবে যায়। প্রাণবন্ত চামড়ার মুখ শীতকালের মৃতপ্রায় উদ্ভিদ-বৃক্ষের মত মলিন হয়ে যায়। ওর মাঝে কি যেন একটা আছে যেটা সবসময় আমাকে জীবনের কথা মনে করিয়ে দেয়। জীবনে বেঁচে থাকার শব্দার্থ করে দেয়। কি টোনা করেছে কে জানে, আমার ভেতরের মৃত মানুষটা সবসময় প্রত্যাবর্তন করে ওর ভালোবাসার যাদুর মন্ত্রে, যাদুর সে কাঠিটার ছোয়ায়।

আমি একবার ভাবলাম, আমার কেউ নেই। বন্যাও নেই। এরকম ভাবা মাত্র মনে হল হার্ট এটাক করছি, নিচে নেমে যাচ্ছি, হাটুতে কোন শক্তি পাচ্ছি না। অতল কোন গভীরে চলে যাচ্ছি চিরতরে। না, আমি এভাবে ভাবার চেষ্টা অবিরত করতে পারি না। খুব অল্প সময়ে আমাকে ক্ষান্ত হতে হয়। আমার অফুরন্ত ভালোবাসার মানুষ থাকতে এসব ভাবার কোন মানে হয় না।

ঠিক বার বছর আগে একবার এক প্রাইভেটে পড়তে গেলাম। বাড়ি থেকে বেশ দূরে। বাসে যেতে হয়। দুরুদুরু বুকে কম বয়সি একটা ছেলে অচেনা একটা যায়গায় পড়তে গিয়েই জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ভীষণ একটা ঝামেলায় পড়ে গেল। তখন বন্যাকে আমি চিনি না। কিন্তু ওই পড়ার ঘরে একটা মেয়েকেই দেখলাম অনেক হাসিখুশি। যেমন তেমন হাসিখুশি না। সারাটা ক্ষণ হাসছেই। হাসিটা সুপার গ্লুর মত মুখে লেগে আছে। পরে অনেক ভেবেছি লাগাতার একটা হাসি ধরে রাখার পেশিশক্তি ও কোত্থেকে পেয়েছিল? এখনও অবাক হই! যাই হোক, ফ্রক পড়া হাসিখুশি এই মেয়েটার দিকে অনেক সংকোচ নিয়ে তাকাচ্ছিলাম আর হতবাক হচ্ছিলাম। বুকের ভেতরে কেমন একটা ব্যথা। ভাবলাম বাড়িতে ফিরেই মাকে বলব, বুকে অনেক ব্যথা। কিন্তু একইসঙ্গে, সেই ব্যথাটা ভালোও লাগছিল। আর বুঝতে পারছিলাম, এই মেয়েটাকে এভাবে দেখতেই স্বাভাবিক লাগে। মানে, হাসি বাদ দিয়ে সাধারণ মুখটা আর ভালো লাগতো না আমার!

সেই একটানা হেসে যাওয়া মেয়েটাও আমাকে এক সময় ভালোবাসতে শুরু করেছিল। এর থেকে ভালো খবর আর কি-ই হতে পারে বলুন? আমাকে বন্যা ভালোবাসতে শুরু করার পর থেকে আমার নিজেকে নতুন একজন মনে হয়। মনে হয় বুকে ভালোবাসার পেসমেকার বসানো হয়েছে। ওর সাথে অনেক ঝগড়াও হয়, মাঝে মধ্যে সাময়িক বিচ্ছেদও হয়। প্রতিটা বিচ্ছেদ থেকে ও যখন ফিরে আসে তখন মনে হয়, আমার হৃৎপিণ্ডে পেসমেকারটা নতুন করে বদলে দেওয়া হয়েছে। আমার নীলাকাশের নীরবতা ভাঙে। আমার অতিশয় একান্ত সন্ধাগুলো মুখরিত হয়ে ওঠে।


তোমার সে নিরন্তর হাসি আমৃত্যু দেখতে চাই আমি। তোমার আন্তরিক হাসিমুখের ব্যাসার্ধটা আরেকটু বিস্তৃত করার জন্য বার বার বলতে ফিরে আসি। আর বলি, ভালোবাসি তোমাকে।

মন্তব্য করুন