জীবনের বর্ণিল গতিপথে সব সময় একটা বিষয় মাথায় রাখা উচিৎ। এ পৃথিবীতে কেউ একা থাকতে আসেনি। যারা সন্ন্যাসী হয়েছেন, তাদের ব্যাপারটা এরকম যে তাঁরা নিজেরাই বেছে নিয়েছেন সে পথ। বাধ্য করা হয়নি তাদের। তাই, সন্ন্যাসী বা একা জীবন বেছে নেওয়া মানুষদের জন্য এ লেখাটি একেবারেই অখাদ্য এবং অনেকটা অনর্থক। কিন্তু যারা জীবনটাকে একটু হেসেখেলে একটু হালকা করেই নিয়ে বাঁচতে চায় তাদেরও দোষ দেওয়া যায় না, তাই না? আমি বলছি বন্ধুত্বের কথা। যেখানে কোন প্রাদেশিক আইন নেই, খাটেনা কোন বাঁধাধরা নিয়মনীতির খেরোখাতার বর্ণমালা।

কথাগুলোর সত্যতা নির্ণয় করা যায় একেকভাবে। যেমন বয়স। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বয়সটা যেন কোন ব্যাপারই না। অনেকের ক্ষেত্রে এটা অবশ্য মনস্তাত্ত্বিক একটা ব্যাপার। কিন্তু ঘুরে ফিরে একই বিষয় দাঁড়ায়। ওই যে, মন! অনেক আগে বয়স যখন অল্প ছিল, কাছের বন্ধুটাকে দেখলে লাথি মারতে ইচ্ছা করতো। এখন দেখলে মনে হয় আলিঙ্গন করি। কিন্তু কেন জানি না, কোন এক অদ্ভুত অচেনা অনাশক্তির আতিসায্য একটা ভয়াবহ জড়তা সৃষ্টি করে! যাই হোক, ওই লাথি মারার ইচ্ছা আর আলিঙ্গনের ইচ্ছা যে মনের ঠিক এক ঠিকানা থেকে উদ্ভূত তা আর বলতে! তাই বয়স যেটাই হোক বন্ধু বন্ধুই! বন্ধুত্ব বন্ধুতাই।

আরেকটা বিষয় লক্ষণীয়। দুজন বন্ধুর মাঝে বন্ধুত্বের যে বন্ধন তৈরি হয় তার এক প্রান্তের সাথে আরেক প্রান্তের অমিল থাকতেই পারে। যে বন্ধুর মমতা আপনি আজ পাচ্ছেন সে মমতার পরিমাণ হয়তো পাহাড়সম আর আপনারটা ঢিবির মত। আবার আপনারটা পাহাড়ের মত হতে লাগতে পারে আরো ক’টা বছর। এর মাঝে কালবৈশাখী ঝড়, তুষারঝড়, ধূলিঝড় অথবা ফাল্গুনী পাতার ঝড় বয়ে যেতে পারে বন্ধুত্বের আঙিনায়। নোংরা আর অপরিস্কার হয়ে যেতে পারে আঙিনাটা। জরাজঞ্জাল ঘিরে ধরতেই পারে। সে আঙিনা ঝাঁট দিবার দায়িত্ব দুজনেরই! এটা মনে রাখাটা ভীষণ জরুরী।

ঝাঁট দিবার স্টাইলটাও ভিন্ন হলে দোষ নেই। দরকার শুধু স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের গ্রহণযোগ্য একটি বন্ধুত্বের আঙিনা! অবলীলায় বলে যাওয়া গল্পগুলো সুন্দর করে থোকা থোকা সাজানো থাকবে সে জায়গায়। থাকবে অবর্ণনীয়-অনির্বচনীয় সুখমুহূর্তগুলোর রাফখাতা। মুহুর্মুহু বেজে উঠবে একসাথে কাটানো অবসরের খলখল হাসিগুলো, ডুকরে ওঠা কান্নাগুলো।

বেঁচে থাকুক ভালোবাসা। চিরঞ্জীব হোক বন্ধুত্ব, আমাদের বন্ধুতা।

মন্তব্য করুন